৫৭ বছর বয়সে না ফেরার দেশে হকির ‘ওস্তাদ ফজলু’

হঠাৎ করেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন হকি কোচ ফজলুল ইসলাম।

চোখে আঘাত পাওয়ায় খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার দীর্ঘ হয়নি, তাই হকি শেখানোতেই মনোযোগী হয়েছিলেন ফজলুল ইসলাম। পুরান ঢাকার আর্মানিটোলা স্কুলের মাঠে শিশু-কিশোরদের হকি শেখাতে শেখাতে তিনি সবার কাছে হয়ে উঠলেন ‘ওস্তাদ ফজলু।’ হকি অন্তপ্রাণ এই মানুষটি বুধবার ৫৭ বছর বয়সে পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে।

হকির আম্পায়ার সেলিম লাকি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন, অর্থনৈতিকসহ নানা কারণে সাম্প্রতিক সময়ের বেশ দুঃশ্চিন্তার মধ্যে ছিলেন ওস্তাদ ফজলু। কিন্তু তার এভাবে চলে যাওয়াটা তিনি মেনে নিতে পারছেন না কোনোভাবেই।

“সকালে ওস্তাদের বাড়ি থেকে ফোন পেলাম। বলল, তিনি পড়ে গেছেন, বুকে ব্যথা পেয়েছেন, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এরপর দ্রুত মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু সেখান থেকে তাকে ফেরানো যায়নি।”

“গতকালও আমরা একসাথে বসেছিলাম। নানা বিষয়ে গল্প হলো। আসলে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিকসহ নানা বিষয় নিয়ে তিনি দুঃশ্চিন্তার মধ্যে ছিলেন। পরিবার নিয়েও দুঃশ্চিন্তা করতেন। কয়েকদিন ধরে তিনি একটু চুপ ছিলেন, ডাক্তার দেখিয়েছিলেন, তারা ঠিকঠাক ঘুমাতে বলেছিলেন। আজ সকালে তিনি চিরঘুমে চলে গেলেন। মেনেই নিতে পারছি না।”

১৯৮৪ সালে মালয়েশিয়ায় জুনিয়র বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে অনুশীলনে ফজলুল আঘাত পান চোখে। এতে তার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যায়। জাতীয় দলে কখনো খেলার সুযোগ মেলেনি তার। ২০০৫ সাল পর্যন্ত ঘরোয়া হকি খেলেন তিনি। খেলোয়াড় হিসেবে চূড়ায় পৌঁছাতে না পারা ফজলুল নেমে পড়েন খেলোয়াড় তৈরিতে।

পুরান ঢাকার বেগমবাজার গলির নাবালক লেনে বাড়ির ছাড়ে, আরমানিটোলা স্কুলের আঙিনায় এক কোণায় শিশু-কিশোরদের শেখাতেন হকি। স্কুলের দেয়ালে তিনি লিখেছিলেন ‘ওস্তাদ ফজলুর মুখের বুলি, এসো সবাই হকি খেলি’- এই শ্লোগান। এখানে হকি শিখতে আসা শিশু-কিশোরদের হকিস্টিক থেকে শুরু করে নানা সরঞ্জামও তিনি কিনে দিতেন নিজেই।

দেশের হকির তারকা রফিকুল ইসলাম কালাম, রাসেল মাহমুদ জিমিরা উঠে এসেছেন ফজলুর হাত ধরেই। বলতে গেলে পুরান ঢাকার অধিকাংশ খেলোয়াড়েরই হকিতে হাতে খড়ি ওস্তাদ ফজলুর কাছে।

স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে নাদিয়া ইসলামকে রেখে গেছেন ফজলুল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *