এইচ এম মাহিনঃ
শীতের তীব্রতা যতবেশি, খেজুরের রস সংগ্রাহকরা ততখুশি’ কথাটা শুনতে অসামঞ্জস্য মনেহতে পারে তবে এটাই সঠিক। কারণ শীতের তীব্রতার সাথে খেজুেরে রসের ভীষন সম্পর্ক, শীত যতবেশি খেজুরের রস তত বেশি পরিষ্কার এবং সুস্বাদু।
বৈচিত্র্যপূর্ণ ষড় ঋতুর দেশ আমাদের বাংলাদেশ। এক একটি ঋতুর রয়েছে একেক রকম বৈশিষ্ট্য। ছয় ঋতুর অন্যতম হেমন্ত আসে শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে আমাদের মাঝে। এই ঋতুতেই প্রকৃতিতে পাওয়া যায় সুস্বাদু খেজুরের রস।
হেমন্তকাল বা শীতের শুরুতে শিবলীদের শুরু হয়ে যায় খেজুর গাছ পরিচর্যা, সাতক্ষীরার ওমর আলী বলেন প্রথমে গাছের অতিরিক্ত পাতাগুলো ফেলেদিয়ে এবং কিছুদিন অপেক্ষা করে যে অংশ থেকে রস সংগ্রহ করবো সে অংশটুকু চেঁছে রস সংগ্রহের উপযুক্ত করে রাখতে হয়।
এরপর অপেক্ষা শীতের। শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে রস সংগ্রহের কাজও শুরু হয়ে যায় গাছিদের।
প্রচন্ড শীতের দিনের রস।
প্রচন্ড শীতের দিন বিকেলে একজন গাছি, একাধিক খেজুর গাছ রসের জন্য প্রস্তত করেন এবং রস সংগ্রহের জন্য মাটির কলস রেখে আসেন গাছের নির্দিষ্ট স্থানে।
সারা রাতধরে কলসে রস জমা হতে থাকে, পরদিন খুব সকালে প্রচন্ড শীতের মধ্যদিয়ে খেজুর গাছ হতে অত্যন্ত পরিষ্কার ও সুস্বাদু রস সংগ্রহ করে থাকেন। শীতের দিনের এই রস জ্বালিয়ে গুড় বা পাটালি তৈরি করলে তা খেতে প্রচন্ড সুস্বাদু হয়ে থাকে।
অন্যদিকে শীত কম হলে রস ঘোলা ও তিতা হয়।
শীত যতবেশি খেজুরের রস তত বেশি পরিষ্কার এবং সুস্বাদু। তাই শীতের তীব্রতা যতবেশি খেজুরের রস সংগ্রাহকরা ততখুশি।
কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষিবিদ আফজাল হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, তাতে এক সময় হয়তো আমাদের এলাকায় খেজুর গাছ থাকবে না। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিত তালগাছের মতো বেশি বেশি খেজুর গাছ লাগানো এবং তা যত্ন সহকারে বড় করা।’
গাছি ওমর আলী বলেন, ‘শীত মৌসুমের শুরুতেই আমরা খেজুর গাছের রস সংগ্রহের কাজ করে থাকি। বছরের এই শীত মৌসুমেই কয়েক মাস আমরা খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে থাকি। এই রস থেকে বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি।’
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খেজুরের রস। শীত মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গে রস সংগ্রহের প্রস্ততিতে ব্যস্ত থাকেন গাছিরা। গাছিদের খেজুর গাছ কাটার কাজটি এক ধরনের শিল্প। এর জন্য দরকার হয় বিশেষ দক্ষতা। ডাল কেটে গাছের শুভ্র বুক বের করার মধ্যে রয়েছে কৌশল, রয়েছে ধৈর্য। খেজুরের রস থেকে বিভিন্ন রকমের গুড় তৈরি করে থাকেন এখানকার গাছিরা।’