নানামুখী চাপে পর্যদুস্ত বাংলাদেশ জামায়াত ইসলাম ও ইসলামী শিবিরের নেতাকর্মীরা। দলের প্রকাশ্য কার্যক্রম আগের মতো নেই। কখনো ভার্চুয়ালে আবার কখনো একেবারে গোপনে নিজেদের কর্মসূচি পালন করেন। এরমধ্যেই হঠাৎ করে বুধবার সকালে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজপথে সরব হয়ে উঠে দলটির নেতাকর্মীরা।
বিজয় দিবস উপলক্ষে সারাদেশে বিজয় মিছিল করেছে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা। বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) ভোর থেকে দিনের বিভিন্ন সময় ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন শহরে জাতীয় পতাকা হাতে র্যালি করেছে তারা। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব শোভাযাত্রা ছিল ঝটিকা ধরনের। কোনও-কোনও স্থানে র্যালির আগে-পরে শুভেচ্ছা বক্তব্যও রেখেছেন সংগঠনটির নেতারা।
ছাত্র শিবিরের প্রচার সম্পাদক মুঞ্জুরুল ইসলাম জানান, বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশে বর্ণাঢ্য র্যালি, শীতবস্ত্র বিতরণ, রক্তদান কর্মসূচি, স্বেচ্ছায় রক্তের গ্রুপ জানার সুযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ঢাকা মহানগরী পুর্ব শাখায়, এবং ঢাকা মহানগরী পশ্চিম শাখায় সেক্রেটারী জেনারেলকে র্যালিতে অংশনিতে দেখাযায় , এছাড়াও মহানগরী উত্তর শাখা, খুলনা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম মহানগরীসহ নগরীর বিভিন্ন শাখা, রাজশাহী নগরীসহ বিভিন্ন শাখা, সিলেট, রংপুর, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, নরসিংদী, মৌলভীবাজার, বগুড়া শহর, কক্সবাজার জেলা, ভোলা, কুমিল্লা জেলাসহ বিভিন্ন শহরের শাখা প্রধান সড়কের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যালি করেছে।
বাংলাদেশের পতাকার লাল সবুজ রঙের টি-শার্ট, মাথায় ফেটি, ও হাতে পতাকা নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আজ র্যালিতে অংশ নেন ছাত্র শিবিরের নেতা-কর্মীরা। পরে তারা দাবি করেছেন, বিজয়ের এত বছর পরও দেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশে যখন ৫০তম বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে তখন লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত এ দেশকে ক্ষমতালোভীরা জিম্মি করে রেখেছে। যে উদ্দেশ্যে লাখো শহীদ জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন তা আজও পূর্ণাঙ্গভাবে অর্জিত হয়নি। বরং ৫০ বছরে বহুবার গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েছে– যা এখন ভয়াল রূপ ধারণ করেছে। ফলে জাতি এখন দারুণ ভাবে হতাশায় নিমজ্জিত।
শিবির নেতা সালাউদ্দীন আইয়ুবি বলেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে নানা ভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। স্বাধীনতার এই শুবর্ণজয়ন্তীতে এসেও আমরা স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছিনা। তিনি দাবি করেন, স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হবে, বাংলাদেশ বিরুধি সকল চুক্তি বাতিল করতে হবে, ভাষ্কর্যের নামে মুর্তি স্থাপন বন্ধ করতে হবে।
সালাউদ্দিন আইয়ুবি বলেন জাতির জন্য দুর্ভাগ্য ও লজ্জার বিষয় যাদের ত্যাগের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে তাদের বিশাল অংশ আজ অবহেলিত। তাদের উত্তরসূরীদের অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অথচ রাষ্ট্রীয় শক্তি বিজয়ের চেতনাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে ব্যস্ত। মহান বিজয়ের চেতনা হওয়ার কথা ছিল এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে মুক্তিযুদ্ধকে স্বার্থ হাসিলের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতাকারী ইসলামী ছাত্র সংঘ নাম পাল্টে বর্তমানে ইসলামী ছাত্র শিবির হিসেবে পরিচিত। জামায়াতে ইসলামীসহ ছাত্র সংঘের অসংখ্য নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।