পাঠ্য বইয়ে জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে উপস্থাপন, প্রতিবাদ

দেশের নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রদের সমাজ ও পৌরনীতি বিষয়ক পাঠ্য বইয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরিচয় পর্বে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’কে রাজনৈতিক দল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দেশের ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিক। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ স্বাক্ষরিত এক যুক্ত বিবৃতিতে তাঁরা এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, “রাজনৈতিক দলের পরিচিতিতে যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’কে রাজনৈতিক দল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে দলটির ঘৃণিত মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো উল্লেখ নেই। ইতিহাস এ কথা বলে যে জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সশস্ত্র অবস্থান নেয় এবং মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং চার লক্ষাধিক নারী ধর্ষণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

তাদের যুদ্ধাপরাধের কারণে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতে ইসলামীকে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে শনাক্ত করেছেন এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালত গণহত্যার দল হিসেবে জামায়াতের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছেন। তাই কোনো অবস্থায়ই ‘জামায়াতে ইসলামী’কে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দল হিসেবে উপস্থাপন করা যায় না। এই বিকৃত তথ্যমূলক পাঠ্য বই আমাদের কোমলমতি ছাত্রদের শুধু বিভ্রান্তই করবে না, একই সঙ্গে সত্য জানা থেকে বিরত রাখবে।”

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জামায়াতে ইসলামী মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান ঘাতক দল ছিল, এই বইয়ে তার উল্লেখ নেই। উপরন্তু ১৯৭১ সালে জামায়াতের মানবতাবিরোধী কার্যকলাপেরও উল্লেখ নেই। স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে প্রণীত সংবিধানে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়েছিল, বাংলার মাটিতে জামায়াতে ইসলামীর কোনো স্থান ছিল না। বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে পরবর্তীকালে দলটি আত্মপ্রকাশ করে, যা উল্লেখ থাকা বাঞ্ছনীয় এবং উল্লেখ না থাকাটা বড় ধরনের অন্যায় বলে আমরা মনে করি।’

দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে গঠিত সম্পাদনা পরিষদ কিভাবে এ ধরনের পাঠ্য বই রচনা ও সম্পাদনা করে, সে ব্যাপারে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট সবার জবাবদিহি দাবি করা হয়। একই সঙ্গে এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক অসত্য ও অর্ধসত্য তথ্য দিয়ে রচিত ও সম্পাদিত পাঠ্য বই অনতিবিলম্বে সংশোধন করারও দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিদাতারা হলেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, হাসান আজিজুল হক, অনুপম সেন, শামসুজ্জামান খান, রামেন্দু মজুমদার, সারওয়ার আলী, ফেরদৌসী মজুমদার, আবদুস সেলিম, মামুনুর রশীদ, মফিদুল হক, শফি আহমেদ, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবির, সারা যাকের, লাকী ইনাম, গোলাম কুদ্দুছ, শিমূল ইউসুফ, মুহাম্মদ সামাদ, হাসান আরিফ ও নির্মলেন্দু গুণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *