জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং ভূমি ক্ষয়রোধসহ নেতৃত্বকে শক্তিশালী করে বিশ্বকে রক্ষার জন্য দু’টি যুগান্তকারী উদ্যোগ হাতে নিয়েছে মরুর দেশ সৌদি আরব।
সম্প্রতি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ‘সৌদি সবুজায়ন’ ও ‘মধ্যপ্রাচ্যের সবুজায়ন’ নামে দুইটি বিশাল কর্মপরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছেন।
সবুজায়ন লক্ষ্য হলো ১৩০ মিলিয়ন টন কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করা, ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা, ৪০ মিলিয়ন হেক্টর অবক্ষয়যোগ্য জমি পুনর্বাসন করা এবং ১০ বিলিয়ন গাছ লাগানো।
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের সবুজ প্রকল্পের আওতায় কার্বন নিঃসরণকে ৬০ ডিগ্রি তাপমাত্রা হ্রাস করে ২০০ মিলিয়ন হেক্টর অবক্ষয়যোগ্য জমি সাশ্রয় এবং ৫০ বিলিয়ন গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রকল্পটি দ্বিতীয় বৃহত্তম আঞ্চলিক প্রকল্প হিসেবে কাজ করবে। যা এই অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম আঞ্চলিক প্রকল্প হবে।
বৃহৎ এই প্রকল্প নিয়ে কাতার, ইরান, সুদান, কুয়েত ও বাহরাইনের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেছেন।
সোমবার সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের জন্য সবুজায়ন একটি উদ্যোগ, যার লক্ষ্য হবে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা, যা অঞ্চলটির জন্য একটি রোডম্যাপ চালু করবে, জলবায়ু পরিবর্তনে মোকাবেলার মাধ্যমে বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারবে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, হাইড্রোকার্বন প্রযুক্তির দক্ষতা বাড়ানো, বিশ্বের বৃহত্তম বনভূমি পরিকল্পনা চালু করা, যার লক্ষ্য মধ্যপ্রাচ্যে পাঁচ হাজার কোটি গাছ লাগানো। আর এর ৫ শতাংশ গাছ লাগালেই বিশ্বজুড়ে ২.৫ শতাংশ কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ বেড়ে যাবে। এই যৌথ উদ্যোগ বিশ্বজুড়ে ১০ শতাংশেরও বেশি কার্বন নির্গমনে ভূমিকা রাখবে।
সৌদি সবুজায়ন কি?
ভবিষ্যত প্রজন্মের জীবনমানের উন্নয়ন ও সুরক্ষার লক্ষ্যে সৌদি সবুজায়ন মূলত সৌদি আরবের জাতীয় উদ্যোগ। যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, গাছপালায় ঢাকা সবুজায়ন স্তরের অগ্রগতি, বাতাসে কার্বনের মাত্রা কমানো, দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই, ভূমির অবক্ষয় বন্ধ ও সামুদ্রিক জীবনের সংরক্ষণ।
এই প্রকল্পে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। যেমন :
১. সৌদি আরবে ১০ বিলিয়ন বৃক্ষরোপণ।
২. বৈশ্বিক জলবায়ু উন্নয়নের ভিত্তিতে চার শতাংশেরও বেশি কার্বন কমানো।
৩. এছাড়া নবায়নযোগ্য শক্তি কর্মসূচির শুরু করা, যা ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তির অংশ ০.৩ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশে বৃদ্ধি করবে।
মধ্যপ্রাচ্যের সবুজায়ন কি?
বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষ্যে মধ্যপ্রাচ্যের সবুজায়ন হচ্ছে এমন একটি উদ্যোগ- যার উদ্দেশ্য সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু উন্নয়ন। যা সৌদি আরব একটা রোডম্যাপ হিসেবে চালু করছে। এই উদ্যোগ বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকবিলায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যেমন :
১. এ অঞ্চলে (মধ্যপ্রাচ্য) হাইড্রোকার্বন প্রযুক্তির সক্ষমতা বৃদ্ধি।
২. বিশ্বের সবচেয়ে বড় বনায়ন পরিকল্পনা চালু করা, যার লক্ষ্য মধ্যপ্রাচ্যে ৫০ বিলিয়ন বৃক্ষরোপণ করা, যা বৈশ্বিকভাবে এক ট্রিলিয়ন বৃক্ষরোপণের ৫ শতাংশ অর্জন হবে এবং কার্বনের মাত্রা ২.৫ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য অর্জিত হবে।
এই যৌথ প্রচেষ্টা বিশ্বব্যাপী ১০ শতাংশেরও বেশি কার্বন নিঃসরণে অবদান রাখবে।
মধ্যপ্রাচ্যে সবুজায়ন কীভাবে কাজ করবে?
আরব উপসাগরীয় দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহের জন্য সহযোগিতা কাউন্সিলে দেশগুলোর সাথে অংশীদারিত্বের সাথে এবং সমস্ত আন্তর্জাতিক মিত্রদের সহযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্যের সবুজায়ন উদ্যোগের লক্ষ্য অর্জনে যৌথভাবে কাজ করবে।
আরব উপসাগরীয় দেশ, মধ্যপ্রাচ্য এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক দেশের সহায়তায় এ লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে। এ রকম প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব ‘মধ্যপ্রাচ্যের সবুজায়ন’ শিরোনামে একটি সামিটের আয়োজন করবে, যেখানে পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের আহ্বান করা হবে যারা একটি রূপরেখা দেবেন। এই বছরের শেষ ভাগ থেকে আগামী দুই দশক উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
সৌদি আরবের পানি সমস্যা, আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সম্পদের অভাব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তেল উৎপাদনের জন্য অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি হয়, যা নিঃসরণ করতে হবে। এ জন্য অঞ্চল উপযোগী গাছ লাগানো, সেচ দেওয়াসহ আরো পদক্ষেপ নিতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের সবুজায়ন সম্মেলন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং সমাধানের জন্য কাজ করবে।
গত চার বছরে সৌদির অর্জন
– পরিবেশ খাতের একটি ব্যাপক পুনর্গঠন সম্পন্ন হয়েছে।
– ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেছে পরিবেশগত বিশেষ বাহিনী।
– প্রাকৃতিক মজুতের পরিমাণ ৪ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশের বেশি বাড়িয়েছে।
– ৪০ শতাংশ গাছপালা বৃদ্ধি পেয়েছে।
-হাইড্রোকার্বন উৎপাদনকারী দেশগুলোতে কার্বন নিঃসরণের সবচেয়ে কার্যকরী স্তর অর্জন করেছে।
– NEOM-এ বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদন প্রকল্প চালু করেছে, যার প্রতিদিন ব্যয় ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৬৫০ টন।
তথ্য এবং পরিসংখ্যান
– মরুভূমি এবং বায়ু দূষণ সৌদি আরব এবং মধ্যপ্রাচ্যের জন্য উল্লেখযোগ্য এবং তাৎক্ষণিক জলবায়ু এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। বালু ঝড়ের কারণে প্রতিবছর বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। এছাড়া গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন থেকে বায়ু দূষণের ফলে সৌদি আরবে দেড় বছরের আয়ু হ্রাস পেয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
– উনিশ শতকের পরে পৃথিবীতে ২৫ শতাংশ বালির ঝড় বৃদ্ধি পেয়েছে।
– ২০৫০ সালের মধ্যে প্রবাল প্রাচীরগুলো বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে বলে অনুমান করা হয়।
– মধ্যপ্রাচ্যে আজ জ্বালানি শক্তি উৎপাদনের শেয়ার ৭ শতাংশের বেশি নয়।